অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ২০০৬ সালে ইরানের রোয়ান ইন্সটিটিউট রোয়ানা নামে প্রথম ক্লোন ভেড়া তৈরির ঘোষণা দেয়। বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে ইরানের এই সাফল্য সেই সময় বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
গত কয়েক দশকে ইরানি গবেষকরা একটি বৈজ্ঞানিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কেবল ইরানি পরিবার এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশার সঞ্চার করতে সক্ষম হয় নি বরং বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা এবং স্টেম সেলের মতো উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একজন হয়ে উঠেছে। পার্সটুডের আজকের নিবন্ধে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এবং পরিচিতি সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হল।
১৯৮০’র দশকে ইরানে বন্ধ্যাত্ব একটি ব্যাপক সমস্যা ছিল এবং ইরানে এ ক্ষেত্রে চিকিৎসার পদ্ধতিগুলো বেশ পুরনো ছিল। এমতাবস্থায় তরুণ এবং উচ্চাভিলাষী গবেষক ডক্টর সাইদ কাজেমি আশতিয়ানী এই চিকিৎসায় একটি আমূল পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেন। একদল ডাক্তার এবং বিজ্ঞানীর সাথে তিনি ১৯৯১ সালে রোয়ান ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। লক্ষ্য? চিকিৎসা জ্ঞানের সীমানায় বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা ও গবেষণার উন্নত পদ্ধতি প্রদান করা। এ ক্ষেত্রে প্রথম সাফল্য ছিল ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফের চিকিৎসায় সন্তান জন্মাদানের সক্ষমতা।
তারা বিজ্ঞানের এমন ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছিল যা বিশ্ব চিন্তাও করেনি। তা হচ্ছে স্টেম সেল। ২০২৩ সালে রোয়ান বিজ্ঞানীরা ইরানে ভ্রূণের স্টেম সেলের প্রথম লাইন তৈরি করতে সফল হন। এই কৃতিত্ব ইরানকে কয়েকটি উন্নত দেশের কাতারে দাড় করিয়ে দিয়েছে যারা এই প্রযুক্তি অর্জন করেছে।
সে সময় অনেক পশ্চিমা বিজ্ঞানী বিশ্বাস করতে পারেননি যে ইরানের মতো যে দেশটি নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক চাপের মধ্যেও রয়েছে তারা চিকিৎসায় এ ধরনের অগ্রগতি অর্জন করতে পারে। ইউরোপীয় গবেষকদের একজন এক সম্মেলনে বলেছেন, আমরা ইরানের কাছ থেকে তেল এবং রাজনীতির খবর ছাড়া আর কিছু শোনার আশা করিনি কিন্তু তারা জ্ঞানের সীমানায় চলে! তারপর রোয়ানের আরেকটি সাফল্য ছিল ২০০৬ সালে প্রথম ভেড়ার ক্লোন তৈরি করা।
এই বৈজ্ঞানিক কৃতিত্ব ইরানকে বিশ্বব্যাপী মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। সিমুলেশন এমন একটি প্রযুক্তি যা শুধুমাত্র সীমিত সংখ্যক দেশ অর্জন করেছিল কিন্তু সমস্ত বাধা সত্ত্বেও ইরান জ্ঞানের এই সীমান্তে পৌঁছেছিল।
কিন্তু রোয়ান কেবল একটি বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান ছিল না। হাজার হাজার বন্ধ্যা দম্পতির জন্য এটি আশা ও বিশ্বাসের স্থল। এ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ইরান এবং অঞ্চলে বিশেষ করে মুসলিম পরিবারগুলোতে ৫০ হাজারের বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে। এছাড়াও, এমএস,ডায়াবেটিস এবং মেরুদণ্ডের আঘাতের মতো রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্টেম সেল নিয়ে গবেষণা বিশ্ব পর্যায়ে এই ইনস্টিটিউটের বেশ নাম রয়েছে।
আজ রোয়ান ইনস্টিটিউট বিশ্বের বৈজ্ঞানিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি। প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে গবেষক এবং ডাক্তাররা রোয়ান বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে অংশ নিতে ইরানে আসেন। এই প্রতিষ্ঠানটি কেবল এটা দেখায়নি যে বিজ্ঞান কোনো সীমানা নেই বরং এটাও প্রমাণ করেছে যে বিশ্বাস ও পরিশ্রম দিয়ে নতুন কিছু অর্জন করা অসম্ভব কিছু নয়।
Leave a Reply